বরগুনায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামী, সতিন ও মেয়ের জামাইকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আসামির প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করেন বিচারক। রায় প্রদানকালে আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটার সময় চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রায় দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতের বিচারক জেলা জজ বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন, জেলার পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মৃত মাজেদ তালুকদারের ছেলে কবির তালুকদার (৫৯), তার দ্বিতীয় স্ত্রী এলাচী বেগম (৫০) ও জামাতা একই সঙ্গে এলাচী বেগমের ছেলে সুজন (৪০)। সে একই গ্রামের মোস্তফার ছেলে। মামলার বাদী ছিলেন ও মামলার প্রধান অভিযুক্ত দন্ড প্রাপ্ত আসামি এবং নিহত মহিমা বেগমের ছেলে হেলাল তালুকদার।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদী হেলাল তালুকদারের মা ভিকটিম মহিমা বেগমকে পিতা আসামি কবির তালুকদারের ৩০ বছর পূর্বে বিবাহ করে। বৈবাহিক জাবীনে বাদীর পিতা যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই তার মাকে নির্যাতন করতো। এছাড়াও তার ছোট বোনের শাশুড়ী আসামি এলাচি বেগমের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। বাদীর বোন রেখা বেগম তার পিতা ও তার শাশুড়ির সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় এবং এর প্রতিবাদ করায় শাশুড়ির এলাচী বেগমও জামাতা সুজন তার ওপর নির্যাতন শুরু করে। তাদের নির্যাতন সইতে না পেরে বোন রেখা বেগম আত্মহত্যা করে।
রেখা বেগমের মৃত্যুর ৩ থেকে ৪ বছর পর কবির তালুকদার তার মায়ের অমতে বোনের শাশুড়ী এলাচি বেগমকে দ্বিতীয় বিয়ে করে। তাদের বিয়ে না মানায় ভিকটিম মহিমা বেগমকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে এবং নির্যাতন চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে বাদীর মা আত্মহত্যা করার জন্য বিষপান করে। চিকিৎসায় বেঁচে গেলেও পরবর্তীতে আসামীরা ভিকটিম মহিমা বেগমকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৩নং আসামী প্রস্তাব দেয় কারেন্টে শক দিয়ে হত্যা করে, কারেন্টের শক খেয়েছে বলে চালিয়ে দিবে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর শুক্রবার সকালে আসামি কবির তালুকদার বাদী হেলাল তালুকদারকে বলে, তোর শ্বশুর অসুস্থ্য তুই তাড়াতাড়ি যা। বাদী সরল বিশ্বাসে শ্বশুর বাড়ি কালমেঘায় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার পর দেখতে পায় শ্বশুর সুস্থ্য আছে এবং তিনি তার পিতা কবির তালুকদারকে কোন ফোন করেননি।
বাদী মামলায় উল্লেখ করেন, আমার শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়ার পর ঐ দিন দুপুর ১২ টা থেকে ১টার মধ্যে আমার মাকে তার বাবার বাড়ির সম্পতি বিক্রি করার জন্য চাপ দিতে থাকে। আমার মা এতে রাজী না হওয়ায় আসামি কবির তালুকদার, এলাচি বেগম ও সুজনের সহয়তায় মহিমা বেগমের ডান হাতের ৩টি আঙুলে, পিঠে ও বুকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আসামিরা চিৎকার করে বলে মহিমা বিদ্যুৎ এর শক খেয়েছে। আমি এই সংবাদ শুনে এসে দেখি ঘর থেকে ১০ মিটার দুরে আমার মা আমড়া গাছের সঙ্গে হেলে পড়ে আছে।
মামলার রায়ের পর বাদী হেলাল তালুকদার বলেন, রায়ে আমি আদালতের প্রতি সন্তুষ্ট। আমি আমার মায়ের হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় হওয়ায় আইনকে শ্রদ্ধা জানাই।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর রঞ্জুয়ারা শিপু বলেন, মামলার ভিকটিমকে পরিকল্পিত ভাবে আসামিরা হত্যা করেছে। বিজ্ঞ আদালতের বিচারকের কাছে সাক্ষীদের সাক্ষ্যতে হত্যাকাণ্ডটি প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদেরকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন এবং অনাদায়ে ১ লাখ টাকা করে অর্থ দণ্ড প্রদান করেন। আমি রায়ে বিজ্ঞ আদালতের প্রতি সন্তুষ্ট। তিনি আরো বলেন, এই রায় প্রদানের মাধ্যমে সমাজে অপরাধ কমে আসবে।